বাংলা

দেশভাগ ও আত্নপরিচয়ের পরিবর্তন/ সংকটঃ

১৯৭১ উত্তরকালে পাকিস্তানে বাঙালীদের জীবনযাপনের অনুসন্ধান

দেশভাগ ও আত্নপরিচয়ের পরিবর্তন/ সংকট গবেষণা
‘- দেশভাগ ও আত্নপরিচয়ের পরিবর্তন ১৯৭১ পরবর্তী – একটা অনুসন্ধানমূলক গবেষণা। এই গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু হলো পাকিস্তানের বাঙা লী অভিবাসীরা যারা ৭০-এর দশকে অর্থাৎ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা/ অভ্যুদয়কালে পাকিস্তানে এসে বসবাস করছে এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্ম যাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা পাকিস্তানে। ইতিহাস পর্যালোচনা করে একই সঙ্গে পাকিস্তানী ও বাঙালী এই দুই পরিচয়ের মাঝে কীভাবে তাদের প্রতিদিনকার জীবনযাপন আবর্তিত হয় তা অনুসন্ধান করা এই গবেষণার উদ্দেশ্য।সাধারণ এক হিসাবে দেখা গেছে পাকিস্তানে ২৮ থেকে ৩০ লাখ বাঙালী আছে। হয়তো এই সংখ্যা আরও বেশিও হতে পারে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে

বাঙালীরা পাকিস্তানে থাকলেও– এই প্রথম বিশাল এই জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা সুখ দুঃখ নিয়ে পাকিস্তানে কোন অনুসন্ধান হচ্ছে।
পাকিস্তানের সমাজ-অর্থনীতির বহুখাতে বাঙালীরা আছে। তারা আছে বহু বছর ধরে। অথচ মোটাদাগে তাদের অনেকেরই নাগরিক অধিকার বলে তেমন কিছু নেই। নেই মানে, তাদের সেটা পাওয়া হয় না। পায় না তারা সেটা। এ থেকে মনে হতে পারে এই মানুষগুলো যেন পাকিস্তানের ‘প্রকৃত’ নাগরিক নয়। নাগরিক অধিকারের ঘাটতির কারণে পাকিস্তানে থেকেও তারা দেশটির সত্যিকারের নাগরিক মর্যাদাহীন। এটা একই সঙ্গে তাদের প্রতিদিনকার জীবন জীবিকাকে কষ্টসাধ্য করে তোলে। একই সঙ্গে যুগের পর যুগ এখানে বসবাস করেও তারা মূল জনগোষ্ঠীর থেকে দূরেই থেকে যাচ্ছে। বাড়ছে কেবল তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা।
২০২১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের/ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। সেই সূত্রেই আমরা আবার এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই বিষয়টি নিয়ে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো অনুসন্ধান করতে চাই

  • [ক] বাঙালী অভিবাসীদের পাকিস্তানের এই জনপদে ঐতিহাসিকভাবে এবং সাংস্কৃতিকভাবে কীভাবে তুলে ধরা হচ্ছে?
  • [খ] বাঙালীদের সামাজিকভাবে তুলে ধরার বিদ্যমান চলতি প্রক্রিয়ায় এবং তাদের নাগরিক অধিকারের ঘাটতির কারণে খোদ ঐ জনগোষ্ঠীর মাঝে নিজেদের ‘পরিচয় এবং পাকিস্তানী সমাজে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে কি উপলব্ধি তৈরি হচ্ছে?
  • [গ] নাগরিক অধিকারের ঘাটতি এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদে অভিগম্যতা কম থাকার মাঝেও সমাজে টিকে থাকার সংগ্রামে বাঙালী জনগোষ্ঠীর মাঝে কি ধরনের প্রতিরোধী/ প্রতিবাদী সংস্কৃতির/ মানসিকতার জন্ম হচ্ছে?
  • [ঘ] এই জনগোষ্ঠীর তরুণরা তাদের জনগোষ্ঠীর এতদাঞ্চলে আগমনের ইতিহাস সম্পর্কে কি জানেন এবং কিভাবে মূল্যায়ন করেন সেই ইতিহাস? আজকের জীবন অভিজ্ঞতার সঙ্গে তারা পূর্বপুরুষের জীবন অভিজ্ঞতাকে কিভাবে মিলান বা তুলনা করেন?

আজ পর্যন্ত, পাকিস্তানের এই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সামাজিক ইতিহাস ও অভিবাসনের ইতিহাস লেখা বা সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। অথচ এটাও পাকিস্তানের সামাজিক ইতিহাসের অপরিহার্য এক অংশ। যা আজও অগ্রন্থিত ও অপ্রকাশিত হয়ে আছে। এটা নথিবদ্ধ করা হলে পাকিস্তানের এবং একই সঙ্গে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ একটা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠেীর সামাজিক ইতিহাস সম্পর্কে সবাই জানতে পারবে। তাদের জন্য সংখ্যাগুরুদেরও সচেতনতা বাড়বে এতে। কিভাবে নাগরিক অধিকারের ঘাটতির মুখে কোন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বাঁচেÑ তাদের প্রতিরোধের সেসব কলাকৌশল সম্পর্কেও জানা যাবে এই অনুসন্ধানের মাধ্যমে।

এই প্রকল্পে যুক্ত থাকছে বহু পেশার মানুষজন। ইতিহাস, সমাজ-মনোবিজ্ঞান এবং শিল্পের নানান পদ্ধতিকে যুথবদ্ধ করেই এই অনুসন্ধান এগোবে। পাকিস্তানের বাঙালীদের কেন্দ্র করে প্রকাশিত-অপ্রকাশিত নানান নথিপত্র খোঁজা হবে এখানে। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে কথা বলে এই বাঙালীদের পেশা নির্বিশেষে মৌখিক ইতিহাসের একটা আর্কাইভ গড়ে তোলা হবে।দেশভাগ ও আত্নপরিচয়ের পরিবর্তন/ সংকট প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট রয়েছে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় এর মাঝে আছে ইউসিএল, এলইউএমএস থাকছে সিটিজেন আর্কাইভ অব পাকিস্তান বা সিএপিও। এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত আছে পাকিস্তানের ইন্সটিটিউট অব লেবার এডুকেশন এন্ড রিসার্চ (পিআইএলইআর) এবং লাহোর স্টুডেন্ট ইউনিয়ন বা এলএসইউ। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এই গবেষণায় মূখ্য ভূমিকা পালন করছে।‘

দেশভাগ ও আত্নপরিচয়ের পরিবর্তন/ সংকট গবেষণার অর্থায়নে থাকছে আর্টস এন্ড হিউম্যানিটিজ রিসার্চ কাউন্সিল ও গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ রিসার্চ ফান্ড। প্রকল্পটির কাজ ২০২০ এর ডিসেম্বর থেকে এর শুরু এবং শেষ হবে আশা করা যায় ২০২৩-এর নভেম্বর। তিনটি পর্যায়ে এই গবেষণার কাজ হবে।:

প্রথম পর্যায়: পাকিস্তানের বাঙালীদের সম্পর্কিত সরকারি বেসরকারি নথিপত্র খোঁজা হবে এ পর্যায়ে। অর্থাৎ এই জনগোষ্ঠী সম্পর্ক এখন পর্যন্ত নথিবদ্ধ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবো আমরা। প্রচারমাধ্যমও এক্ষেত্রে একটা বড় উৎস হবে। আমরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলোর কাছ থেকে কিছু পেলে সেটাও যাচাই বাছাই করতে সংগ্রহে নেবো।
দ্বিতীয় পর্যায়: এ সময়ে মূলত ব্যাপক আকারে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে। সিটিজেন আর্কাইভ ফাউন্ডেশন এ সময় মূল সহযোগীর ভূমিকা নেবে। তারা ডিজিটাল রেকডিং সংরক্ষণ করবো। যা পাকিস্তানের বাঙালীদের সম্পর্কে একটা স্থায়ী আর্কাইভ হয়ে উঠবে। প্রথমে করাচিতে সিনিয়র বাঙালীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। এরকম সাক্ষাৎকারদাতাদের বাছাই করা হবে নানান পেশার মানুষদের মধ্য থেকে। তাঁদের হয়তো রাজনৈতিক বিশ্বাসেও থাকবে ব্যাপক বৈচিত্র। এরপরই এই কমিউনিটির তরুণ-তরুণীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। যাদের বয়স হবে ১৩-১৮। চেষ্টা করা হবে সাক্ষাৎকারদাতা বয়স্ক ও তরুণদের একই পরিবার থেকে বাছাইয়ের। আর্কাইভ তৈরির সময় আমরা যেসব নথিপত্র পাবো সেগুলোর ভিত্তিতে সাক্ষাৎকারকালে কথা বলা হবে। এর ফলে সাক্ষাৎকারগুলো অনেক বৈচিত্রময় নতুন তথ্য-উপাত্তের জন্ম দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এরকম কিছু সাক্ষাৎকার নেয়া হবে মোহাম্মদি মাচ্ছের কলোনিতে। যেখানে বাঙালীরা সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় থাকেন। এ কাজের অংশ হিসেবে আমরা করাচিতে তিনটি ধারাবাহিক শিল্পানুষ্ঠান করবো। এই কর্মসূচিতে যুক্ত তরুণ-তরুণীরা তাতে যুক্ত হবেন।

তৃতীয় পর্যায়: কাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই স্তরে শিল্পকলাভিত্তিক গবেষণা ও তথ্যচিত্র তৈরি হবে। এর নেতৃত্বে থাকবেন ন্যাশনাল কলেজ অব আর্টস-এর শিল্পী ইরফান হাসান। এই গবেষণা ও তথ্যচিত্রের প্রক্রিয়ায় অনেকগুলো কর্মশালা হবে। যেসব কর্মশালায় যুক্ত থাকবেন বাঙালী সমাজের মানুষ, চিত্রশিল্পী এবং সংগীত শিল্পীরাওসমগ্র এই আয়োজন থেকে অনেক শিল্পকর্ম এবং সঙ্গীত তৈরি হবে বলেও আশা করা যাচ্ছে। সেরকমই লক্ষ্য তৃতীয় পর্যায়ের এই কাজের। পুরস্কার জয়ী সিনেমা পরিচালক জাওয়াদ শরীফও এ পর্যায়ে যুক্ত হবেন। কর্মশালার অংশগ্রহণকারীরা তাঁর সঙ্গেও কাজ করবেন। যা থেকে পাকিস্তানের বাঙালীদের অতীত ও বর্তমান জীবনকে ঘিরে একটি চলচ্চিত্র তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Logo

The POI Study

The Partition of Identity (POI) project examines the Bengali community in Pakistan. Estimates suggest that there are between 2.8 – 3 million members of this group living in Pakistan, but in reality, the numbers are likely to be much higher.

Learn More

Contact

  • Week Days: 09.00 to 18.00 Sunday: Closed